top of page

আঙ্কোরভাটের আনাচেকানাচে

Writer's picture: Sudeshna DasSudeshna Das

 

ইতিহাসের বিস্ময় পাশে নিয়ে বসবাস করেও যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে কম্বোডিয়ার মানুষজনের মুগ্ধ হওয়ার অবসর ৷ অথচ আঙ্কোরভাটের দেশের প্রাণভোমরা লুকিয়ে আছে তার মানুষের জীবন ও যাপনের গল্পে ৷



 আমি বড় হয়েছি দেশভাগের গল্প শুনে! সেই থেকেই বোধ হয় এক দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আরেক দেশের দিকে হেঁটে চলা একদল মানুষের গল্প মাথার মধ্যে স্লাইড় শো বা চলমান দৃশপেট হয়ে পেঁথে গিয়েছে ৷ থাইল্যান্ডের সীমানায় অরণ্যপ্ৰথেট (Aranyaprathet) পেরিয়ে কম্বোডিয়ার পয়পেট এর দিকে দীর্ঘ হেঁটে চলার ফাঁকে আশ্চর্ঘভাবে ঢুকে গিয়েছিলাম আমার মাথার ভিতর চেপে বসা সেই আনআইডেন্টিফায়েড় গল্পটায় ৷ অথচ তখনও জানতাম না সে দেশের মানুষদের জীরনযাপনের গল্প ৷

  

চলার শুরু...


টিনের ঘেরাটপে ঢাকা সরু একফালি ফুটপাথ , তার একধারে সারিসারি দােকান- বাসনপত্র , জামাকাপড়, ব্যাগ, ছাতা, টুপি, আরও কত কী I ঠিক যেন কলকাতার চাঁদনি মার্কেট আর তাই আমার নস্টালজিয়ার নকশিকাঁথা ৷ শতাব্দীপ্রাচীন এই বাজার এক সময় ছিল পরিব্রাজকদের চিন থেকে থাইল্যান্ডের আযুথায়া (Ayutthaya) পৌঁছনাের পথে বিশ্রামস্থল৷ সাতের দশকে কম্বোডিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় ‘কিলিং ফিল্ড’ এর গণহত্যা থেকে বাঁচার জন্য দলেদলে মানুষ আশ্রয় নিত এর আশপাশে৷

আবার বহুদিন ধরে এই বাজারেই চলছে রেআইনি পণ্যের কেনা বেচা, এমনকী রন্যপ্রাণীর চোরাপাচার... খোঁজ করলে এখানে পাওয়া যাবে বাঘের নখ, ভালুকের থাবা, গন্ডারের শিং বা ধূসর টিয়া পাখিও ৷ এইসব অনুষঙ্গ জুড়ে জুড়ে বাজার যেন এক স্মৃতির দেবাজ, এক - এক গলিতে এক - এক গল্পের কুঠুরি ৷


ঢেউ থেলানাে সোনালি ছাদ- দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার চিরন্তন স্থাপত্যচিহ্ন। বিশ্বের জুয়াড়ি মহলের এক অতীব পছন্দের গম্ভব্য এই পয়পেট ৷ রছরভর বিদেশি, বিশেষত থাই জুয়াড়িরা ভিড় জমায় পয়পেট এর বিলাস বহুল ক্যাসিনোগুলিতে ৷ থাইল্যান্ডে জুয়া বেআইনি কিন্তু থাই পাসপোর্ট অফিস এবং ক্যাম্বোডিয়ার ইমিগ্রেশন অফিসের মধ্যবর্তী ক্যাসিনোগুলিতে থাই নাগরিকেরা অনায়াসেই পৌঁছে যায়৷ তবে ‘কিংডম অফ কাম্বোডিয়া’র এই ‘স্পেশাল ক্যাসিনো জোন ’ সে দেশের মানুষজন, স্থানীয় ভাষায় খ্মের (Khmer) জনগণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে ৷ ক্যাম্বোডিয়ার বেশিরভাগ জনপ্রিয় আকর্ষণবিন্দু ঘিরে এই সীমাবদ্ধতার পুনবাবৃত্তিই খ্মের জীবনের দিকনির্দেশ করে ৷ এ যেন বাড়ির ঊঠােনে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য, অথচ তাদের মুগ্ধ হওয়ার অধিকার বা অবসর নেই !


আমার খ্মের গাইড ব্রেমের ভাষায় “আমরা প্রতিদিন সকালে কাজে বেরোই আজকের খাবারের চিন্তা মাথায় নিয়ে ৷ তার বাইরে কিছু ভাবার মতো অবস্থায় এখনও আমবা পৌঁছইনি ৷”


 

স্মৃতির কুহক


একটি দেশ- একাধারে ‘আঙ্কোরভাট’ (Angkor Wat), ‘আঙ্কোরথম ’ (Angkor Thom), ‘বায়ন’ (Bayon) ও অন্যান্য মন্দিরগুলি ঘিরে ইঊনেসকো ( UNESCO) ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, আবার ১ ৯৭৫ থেকে ১ ৯ ৭ ৮ এর রাজনৈতিক অস্থিরতা বা কুখ্যাত ‘কিলিং ফিল্ড’ এ ‘খ্মের রুজ (Khmer Rouge) বাহিনীর ২ o, ০ o, ০ ০০ গণহত্যার পরেও টিকে থাকার ইতিহাস, সরমিলিয়ে এক মন্ত্রমুগ্ধকর বিষন্নতা ৷


সেই আবহমান বিষন্নতা তৈরি করে এক দুর্বোধ্য ভাললাগা ৷ ভাললাগার রেশ ব্যাপ্ত হয় ভোরের সিঁদুরে আলোয় স্নাত, পূর্বমুখী বায়ন মন্দিরে মূর্তি তোরণের আশেপাশে ৷ কত শতাব্দীর গল্প ‘সিল্ক রুট’ ধরে রয়ে এসে জমে থাকে মন্দির অলিন্দের দেয়াল ভাস্কর্যে ৷ মন্দির সংলগ্ন গ্রন্থাগারের ধ্বংসাবশেষে কোনও এক বিষন্নতম সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে এক মুহূর্তের জন্যে মনে হয়, ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হ্যাঁটতেছি পৃথিবীর পথে. … … ’ এই অনন্তে মিশে যাবার জন্যে।


শতাব্দীপ্রাচীন মহীরুহের শিকড় দিয়ে ঘেরা ‘তা ফ্রম’ (Ta From) এর কোনও এক ধ্বংসস্তূপের ফাঁকে উঁকি মারে অবগুণ্ঠিতা নারী মূর্তি, শিকড়ের জালে ঢেকে গিয়েছে মুখের এক পাশ আর সেখানেই পুঞ্জীভূত রহস্য!


পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে পুরোদমে ৷ বিভিন্ন দেশের সহায়তায়, বিশেষভাবে ভারতবর্ষের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য! এখানেই আলাপ হল গুরুগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার রোহিত শর্মার সঙ্গে ৷ গত সাত বছর ধরে কাজ করছেন আঙ্কোরের বিভিন্ন মন্দির চত্বরে ৷ সাক্ষী ইতিহাসের ঊন্মোচনের... কিন্তু এবার দেশে ফিরতে চান ৷ ফেরা অতীত থেকে বর্তমানে ৷ মাঝে রেখে আসা একটুকরো সত্যির স্মৃতি! এইদেশের মন্দির গুলিও স্মৃতিচিহ্নে আচ্ছন্ন- দেওয়ালের ফাটল, প্ৰতিধ্বনিময় অনাড়ম্বর গর্ভগৃহের কোণে রয়ে গিয়েছে সেইসব স্মৃতিচিহ্ন , অমােঘ সময়ের চিহ্নের মতো ৷

 

মন্দিরের অলিন্দে


ক্যাম্বোডিয়ার অন্যতম স্থানচিহ্ন - আঙ্কোরভাট- খ্মের ভাষায় মন্দির নগরী, যার উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ ‘নগর’ থেকে। সেই স্কুলের ইতিহাস বইয়ে পড়া ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ মন্দির’- হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন তিন ধর্মের সৃষ্টিতত্বের এক আশ্চর্য মেলরন্ধন, আবার বাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতীক ও বটে ৷ তিন ধর্ম মতের সৃষ্টিতত্বের কেন্দ্রবিন্দু কাল্পনিক সুমেরু পর্বতের আদলে তৈরি এই বিষ্ণুমন্দির পশ্চিমমুখী৷ হিন্দু পুবাণমতে এই দিকনির্দেশ মৃত্যুর প্রতীক ৷ এমনকী দেয়ালের ভাস্কর্যের সারিও বাম অভিমুখী৷ এ কী বিষ্ণুর বামাবর্তী শঙ্খের প্রতিরূপ ? নাকি মন্দির প্রতিষ্ঠাতা রাজা দ্বিতীয় সূর্যবর্মণের রহস্যময় সমাধিস্থলের প্রতীক ? এইসব প্রশ্নে গভীরভাবে আচ্ছন্ন হয়ে হেঁটে চলেছিলাম মন্দিরের চারধারের পরিখার উপর দিয়ে তৈরি পাথুরে রাস্তা ধরে , পেরোলাম মূল প্রবেশদ্বার, তারপর বিস্তৃত চাতাল আর অবশেষে দীর্ঘ সিঁড়ি রেয়ে মূল তোরণ ৷ এ যেন হিন্দু শাস্ত্রে উল্লেখিত চার যুগ আর জীবনের চার অধ্যায়ের এক সমান্তরাল যাত্রা ৷ দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে সৃষ্টির মূলে অথবা মহাবিশ্বে বিলীন হওয়ার এক রূপক ৷


এই চলার পথে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য প্রতীক... ‘সপ্তমূখী নাগ’, নৃত্যরত অপ্সরা , শিব ও শক্তিচিহ্ন আর স্থানীয় জনজীবনের দৃশ্যাবলী ৷ সব মিলিয়ে এক সহজিয়া সান্ধ্যধর্মের প্রতিরূপ! ঠিক যেন ধর্ম সংস্কারক বাজা সূর্যবর্মনের রহস্যময় অথচ সহজ ধর্মাচরণের ছবি... শৈব , বৈষ্ণব আর বৌদ্ধ ধর্মের এক সহাবস্থান। তাই গোধূলির আলােআঁবারিতে আঙ্কোরের সিলুয়েট মনে পড়ায় সন্ধিক্ষণের পদাবলী... চর্যাপদের সান্ধ্যভাষা , প্রান্তিক অথচ আদি অন্তহীন রহস্যময়তা ৷ এই আদি অন্তহীনতাই যেন আঙ্কোরের ভরকেন্দ্র- এক চিরকালীন কুহক ৷


সেই কুহক কোনও না কোনওভারে ঘিরে আছে অন্যান্য মন্দিরগুলিকেও... তাই ছোট গল্পের মতো স্মৃতিচিত্র গড়ে ওঠে! নির্জন সন্ধেয় প্রেয়া খান (Prea Khan) এর চাতালে বসে ছবি এঁকে চলে স্থানীয় পটুয়া ৷ রাইস পেপার উপর টেম্পল রাবিংয়ে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয় চরিত্র গুলির মুখের আদল, দেহের ভঙ্গিমা, সূক্ষ্ম কেশবিন্যাস, চীনাংশুকের ভাঁজ, তৈরি হয় মহাকাব্যের পরিচয়! হয়তো আমাদের কোনার্ক বা খাজুরাহোর দেয়ালের ভাস্কর্যের মতোই, তবুও যেন স্থান কাল ভেদে এই কাব্যের পাত্র পাত্রী একটু ভিন্ন ৷


বাঙ মিলিয়া (Bang Melea) মন্দিরের চারি ধরে শুকনো পরিখায় জমে থাকা পাতার স্তূপে ঝাড়ু লাগায় যে অর্ঘশতাব্দী পেরনো লোকটি, তার ছোট্ট রেডিয়ে7তে রেজে চলে গান... সে গানের শব্দ অচেনা হলেও সুরটা চেনা চেনা ! সেই সুর বাতাসে পাক খেয়ে ফেরে আর সেই সুরে ভর দিয়ে ভেঙ্গে যায় পাতার স্তূপে জমে থাকা স্মৃতির আকরিক, অশ্রুত গানের মতো ৷ কল্পনার পালে হাওয়া লাগে ৷


বানতেই স্ত্রেই (Banteay Strei) মন্দিরের গোলাপি বেলে পাথরের দেওয়ালে সূক্ষ্ম পৌরাণিক ভাস্কর্য, ভাঙা তোরণদ্বারের পাশের তরঙ্গহীন পুকুরের বুকে তার প্ৰতিচ্ছবি, মন্দিরের পিছনের চাতালে বিশাল গাছের ছায়ায় ঘেরা শিব ও শক্তি চিহ্ন আর চতুর্ভুজে আবদ্ধ অগম্য গর্ভগৃহ সব মিলেমিশে এক অনন্য উপস্থিতি, ঠিক যেন খাজুরাহোর পার্বতী মূর্তি, নম্র অথচ তীব্র ইশারাময়, গম্ভীর অথচ আকর্ষক ৷


 জীবন ও যাপন


এইসব অরণ্যবে ষ্টিত প্রাচীন মন্দিরগুলাের প্রতিবেশী শহর সিয়েম রিপ ( Siem Reap), এক জনারণ্য, আবার যুদ্ধোত্তর নাগরিক ক্যাম্বোডিয়ার গড়ে ওঠার গতিময় উদাহরণও রটে ৷ এই শহরের প্রাণবাযু পুরনো টাউন স্কোয়ারের পাশ দিয়ে বয়ে চলা সমনামী নদীটি ৷ নদীর তীরে ফরাসি উপনিরেশের অনুসঙ্গে গড়ে ওঠা ইউরোপিয়ান স্থাপত্য রীতির বাতিঘর, বুক ক্যাফে , আর্ট গ্যালারি, ম্যাসাজ পার্লার বা বর্ণিল ‘পাব স্ট্রীট ’ অনায়াসেই তৈরি করে এক কসমােপলিটান চরিত্র ৷ ম্যাজিকের মতো গড়ে ওঠে এক উৎসব সদৃশ উপস্থিতি ৷ কিন্তু এই উদযাপনের চলচ্চিত্রে খ্মের জ নগণের অংশগ্রহণ শুধুই জীবিকার তাগিদে ৷



কখনও বা টুকটুক চালক ; বড় রেস্তরাঁর কর্মচারী ; সাপভাজা, ব্যাঙভাজা , ঢিমে আঁচে মৃদু পোড়ানো সুম্বাদু হাঁসের মাংস আর কোয়েলের ডিমের ফেরিওয়ালা ; ‘অ্যান্টিক শপে' র ছিপছিপে হাস্যমুখী বিক্রেতা কিংবা ‘মাসাজ পার্লার এর অক্লান্ত সেবিকা , চরিত্রগুলি আলাদা, তবে ভূমিকা একই! পর্যটকদের জন্য নিরলস সেবার আয়োজন।


তাই খ্মেরদের দৈনন্দিন জীবন্ যাপনের ছবি খুঁজতে হলে ঘুরে আসতে হবে শহর ছাড়িয়ে একটু দূরে! ঠিক যেমন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ মিষ্টি জলের হ্রদ, টন লে স্যাপ (Ton Le Sap) ঘিরে গড়ে ওঠা জেলেদের গ্রাম ক্যামপং ফলুক (Kompong Phluk) I সিয়েম রিপ থেকে প্রায় আধঘণ্টা গাড়ির পথ পেরনোর পর বাকি যাত্রাপথের একমাত্র ভরসা জেলেদের মোটর বোট। সরু নদীর একবার ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ছোট গ্রাম। লম্বা গাছের গুঁড়ির মাচানের উপর রঙিন কাঠের বাড়ি- কমলা, নীল, গোলাপি, সবুজ। মাচানের উপর দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িগুলি যেন লম্বা রণপা চড়ে প্রস্তুত সব ঝড়ঝাপটা আর বন্যার মোকাবিলায় ৷ প্ৰতিবাড়ির সামনে ঘটে বাঁধা রয়েছে একটি করে নৌকো ... ঠিক যেন “নদীর ধারে বাড়িটি থাকবে চৌকো , থাকরে একটি শ্যাওলা রাঙানাে নৌকো … … ”


এই গ্রামের জীরনধারা ওই নদীর গতির সঙ্গে এক তারে বাঁধা ৷ তাই দুপুরের খোশ গল্প থেকে শুরু করে আনাজপাতি বাজার আর দৈনন্দিন ঘর গেরস্থালির খুঁটিনাটি নৌকোর পাটাতনে জলের উপর! এই গ্রামের মেয়েরা ভারী ছটফটে আর সপ্ৰতিভ ৷ আলাপ হল স্থানীয় মেয়ে সুবর্ণার মায়ের সঙ্গে ৷ চল্লিশের দোরগোড়ায় পৌঁছনাে ছেটিখাটো পুতুলের মতো মানুষটি ফেরি করেন স্কুলের বইপত্র ৷ লাভের একটা অংশ বরাদ্দ স্থানীয় স্কুলের উন্নতি তহবিলে ৷ এরকম আরও অনেকের ছোট বড় সাহায্য মিলিয়ে গড়ে উঠেছে গ্রামের বৌদ্ধ উপাসনালয় , স্কুল, রস্তোঘাট ৷ এবা প্ৰবলভারে সামাজিক আর সেটাই বোধহয় এদের বেঁচে থাকার মূল রসদ। তাই মেকং এর জল টন লে স্যাপ উপচে গ্রাম ভাসানাের পরেও এরা আবার ঘর বাঁধে ৷ সুবর্ণার বাবার মতো অনেকেই টন লে স্যাপে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফেরে না। তবুও থেমে যায় না সুবর্ণার মায়ের অদমা প্রাণশক্তি ৷ মনে পড়ে যায়, ওই গ্রামে শেষ বিকেলের আলোয় দেখা এক সুন্দরী কিশোরীর আসন্ন মাতৃত্বের গর্বে দৃপ্ত মুখটি... যে দীপ্তি স্নান হয় না অনাগত ভবিষ্যতের চরম অনিশ্চয়তাতেও ৷


এই প্রাণশক্তির প্রাচুর্য ক্যাম্বোডিয়ার ঘরে ঘরে ... তাই গৃহযুদ্ধর সময় পরিবার পরিজন হারানো ব্রেম ঘর বেঁধেছেন তারই মতো আরেক সব হারানো মানুষের সঙ্গে ৷ চারটি ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁদের ভরা সংসার ৷ ব্রেম এর স্ত্রী সম্পূর্ণ নিরক্ষর হলেও তাঁদের ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষার দােরগোড়ায় পৌঁছেছে ৷ আঙ্কোরভাট চত্ত্বরে স্মারক ফেরি করে ফেরা ছোট্ট মেয়েটি স্কুলছুট নয়। সকালে স্কুলের পর প্রায় ১ ০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে তবে সে মন্দিরে পৌঁছয় কিছু রােজগারের আশায় ৷ ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত অসংখ্য মানুষ একসঙ্গে ঊপার্জনের লড়াই চালায়, সুর বাঁধে, শোনায় জীবনের গান। আবার ছোটবেলা থেকে ল্যান্ডমাইন পেতে চলা ‘আকি বা’ আজ নিরলসভাবে ল্যান্ডমাইন নিষ্ক্রিয় করে চলে ৷ তার ল্যান্ডমাইন মিউজিয়াম ঘিরে গড়ে উঠছে এক বৃহৎ পরিবার- ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে বাবা মা হারানো বাচ্চাদের আশ্রয়স্থল ৷



সিয়েম রিপের উ কণ্ঠে গড়ে ওঠা আঙ্কোর সিল্ক ফ্যাক্টরিতে কর্মরতা মেয়েবা আসে যুদ্ধবিদ্ধস্ত পরিবারগুলো থেকে। অথচ সেই সূচিবিদ্ধ ব্যাথা রোধ করে না তাদের সৃষ্টিকে৷ ঠিক যেন গুটিপোকার মতো নিজেকে নিজেকে ধীরে ধীরে উজাড় করে , অতি যত্নে বুনে তোলে জ্যামিতিক নকশা সোনালি রেশমের জমিতে ৷ তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে পর্যটকদের গল্প শোনাবে বলে - গুটিপোকার জীবনচক্রের গল্প, জীবন বুনে তোলার গল্প, যা লেখা আছে মালবেরি গাছের পাতায় পাতায়।


সে গল্পেরা বাতাসে পাক খে ছড়িয়ে পড়ে বানতে স্ত্রেই এর পাশের ধানক্ষেতে, উপচে পড়ে টন যে সাপের জলে আর আমি দেশে ফেরার পথে অবাক হয়ে ভাবি আঙ্কোরভাট এর দেশের প্রাণভোমরা লুকিয়ে আছে এই গল্লগুলির মধ্যে। তাই আবার আসতে হবে ক্যাম্বোডিয়া এ মানুষের গল্পের টানে ৷


 ( Photo courtesy : Arnab Mukherjee )

11 views0 comments

Comments


For Corporate / Franchise / Collaboration Enquiry

Email: info@banglacanvas.com

 Whatsapp: +91-7044979849

Available: Monday - Friday, 10:00am - 6.00pm

Company Marketing Office: 1554, H Block, C R Park, Delhi 110019

  • alt.text.label.Facebook
  • alt.text.label.Instagram

©2024 by Bangla Canvas Pvt Ltd

bottom of page