top of page
Writer's picturePiyanki Mukherjee

লুপ্তপ্রায় পদের সন্ধানে: শিউলিপাতায় শশাশুক্তো


'চৈতন্যচরিতামৃত'তে বলা হচ্ছে, রাঘব পন্ডিত মহাপ্রভুর জন্য নীলাচলে যে বিভিন্নরকম খাদ্যদ্রব্য নিয়ে গিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিল শুকুতা বা সুকুতা,পরবর্তীতে যা শুক্তা অথবা শুক্তো নামে পরিচিতি পায়। কি ছিল এই শুকুতা? শুকুতা বলতে সেই সময় শুকনো পাতা বোঝানো হত যা ছিল বায়ুনাশক। তিতো পাটপাতাকেই ব্যবহার করে পাঁচমিশালি একটি পদ রান্না হত। সাথে থাকত নির্দিষ্ট কিছু মশলার ব্যবহার। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় পদ্মপুরাণ-এ বেহুলা লখিন্দরের বিয়ের ভোজনবিলাসে শুক্তোর উল্লেখ আছে। এমনকি রায়গুণাকার ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলেও বাইশটি নিরামিষ পদের মধ্যে মহাসমারোহে বিরাজমান ছিল শুক্তো। এ তো গেল ইতিহাসের প্রাচীন উৎসকথা৷ কিন্তু আজকের তারিখে দাঁড়িয়ে বাঙালি পালাপার্বণ হোক বা ঘরোয়া নিত্যদিনের পাকশালা, কুলীন স্থান অর্জন করেছে শুক্তো। সামান্য কিছু সবজী সাথে তিতোস্বাদযুক্ত যে কোনো একটি সবজি বা কোনো পাতার ব্যবহার করে একটি রান্না।

ঠাকুরবাড়ির দুধ শুক্তো হোক অথবা লুপ্তপ্রায় আমিষ শুক্তোর কাঁটাচচ্চড়ি...শুক্তো হরেকরকম। আজ দেখাব শশাশুক্তো। এ প্রচন্ড দাবদাহে এই লুপ্তপ্রায় পদটি শুধু শরীর নয়,ঠান্ডা করবে মনও।




কি কি লাগছে?

খুব সামান্য ক'টি উপকরণ। শশা, শিউলিপাতা, মটরডালবাটা, আদাবাটা, রাঁধুনি-তেজপাতা বাটা, সামান্য দুধ, সর্ষের তেল, পাঁচফোড়ন, শুকনো লংকা


কিভাবে করব?


অত্যন্ত সহজ এর প্রণালী। শশা কেটে নিতে হবে লম্বা লম্বা করে,একটু পাতলা কাটতে হবে। কারণ আপাতদৃষ্টিতে দেখতে নরম হলেও শশা সেদ্ধ হতে বেশ খানিকটা সময় লাগে। এরপর শেফালি ফুল গাছের কচি কচি কয়েকটি পাতা খুব ভালো করে ধুয়ে কুচিয়ে কেটে নিয়ে সামান্য নুন মাখিয়ে রেখে দিতে হবে। পাশাপাশি মটরডাল বাটার মধ্যে সামান্য নুন হলুদ দিয়ে খুব ভালো করে ফেটিয়ে ছোট ছোট করে বড়া ভেজে নিতে হবে। কড়াইতে যৎসামান্য তেল দিয়ে কুচিয়ে রাখা শিউলি পাতা নাড়াচাড়া করে নিতে হবে ততক্ষণ যতক্ষণ পর্যন্ত না পাতা থেকে কাঁচা গন্ধ মরে না যায়।

এবার পালা আসল পদ্ধতিতে ঢোকার। কড়াই বসিয়ে তাতে তেল দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে, তেল গরম হলে তাতে ফোড়নে হাফ চামচ পাঁচফোড়ন আর একটা তেজপাতা এবং একটা শুকনো লংকা দিয়ে নেড়ে গন্ধ ম ম করতে শুরু করলে কেটে রাখা শশা দিতে হবে, সাথে অবশ্যই নুন দিতে হবে কিন্তু হলুদ শুরুতেই নয়। গ্যাসের আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে,জল বেরোবে অনেক, সেই জলেই সেদ্ধ হবে শশা। ৭০%সেদ্ধ হয়ে এলে এবার আদাবাটা, রাঁধুনি-তেজপাতাবাটা এবং এক কাপ পরিমাণ দুধ দিয়ে নাড়তে হবে ক্রমাগত। এই পর্যায়েই সেঁকাভাজা শিউলিপাতা,(অনেকে শেফালিও বলেন) দিয়ে দিতে হবে।এরপর আরও কিছুক্ষণ চাপাঢাকা। তারপর ঢাকা খুলে ভেজে রাখা মটরডালের বড়া এবং এক চামচ পরিমাণ চিনি। ব্যস তৈরী হয়ে গেল প্রাচীন বাংলার অথেনটিক শশাশুক্তো

1 view0 comments

Comments


bottom of page