মহাঅষ্টমীর কুমারী পূজা আর সাবেক ভোজন
মহাঅষ্টমী, বাংলার এবং বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ পুজো। শারদ উৎসব নিয়ে মাতামাতি উচ্ছ্বাস আবেগ আনন্দ ভালোবাসা-- ঠিক কোন শব্দ দিয়ে যে সঠিক অর্থে দুর্গাপূজাকে প্রতিস্থাপিত করা যায় তা হয়তো কোনো বাঙালিই পার্ফেক্ট বলতে পারবেন না। পুরাণ বলে, শ্রীরামচন্দ্র তাঁর স্ত্রীকে অসীম ক্ষমতাধারী মহাপরাক্রমশালী রাবণের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য অসময়ে মা দুর্গার অকাল বোধন করে শরৎকালে এই শারদীয়া উৎসবের সূচনা করেন। পুজোয় কেন্দ্রবিন্দু হল অষ্টমীতিথি। এইদিন আপামর বাঙালি ডুবে যায় আনন্দসাগরে। সকালেই পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ দিয়ে শুরু হয়ে একে একে কুমারী পূজা এবং সন্ধিপূজার মাধ্যমে উদযাপিত হয় মহাঅষ্টমী।
মনে করা হয় এই তিথিতে অঞ্জলি দিয়ে মায়ের কাছে আত্মনিবেদন করলে অন্তরের সাড়া মেলে। আসলে আধ্যাত্মিকতা অনুযায়ী অন্তরই তো আসল চালিকাশক্তি, আমাদের মন প্রাণই হল দুর্গা। অঞ্জলির পর আসে কুমারী পূজার রীতি। পৌরাণিক কাহিনী বলে এই পূজার উৎপত্তি হয় বানাসুর বধের মাধ্যমে। বানাসুরের দাপটে যখন স্বর্গ মর্ত্য পাতাল ধূলিসাৎ হবার জোগাড় তখন দেবতারা মহাকালীর শরণাপন্ন হন এবং মা কালীই কুমারী দুর্গার রূপ ধরে এসে বানাসুর বধ করেন। উপাখ্যান বলে সেই কারণেই দুর্গাপূজার সাথে জড়িয়ে আছে কুমারী পূজা।
এ তো হল পুরাণকথা। দর্শন বলে অন্য তত্ত্ব। মা জাত হল এ পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা সহনশীল জাত। মায়ের মধ্যেই আছে ত্রিভুবন। জগৎজননী মা ত্রিকালদর্শী। তাঁর অন্তরবীজেই নিহিত আছে স্বয়ং সম্পূর্ণা রূপ। তবে সমস্ত বারোয়ারী পুজোয় কিন্তু কুমারী পূজা হয় না। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নারী জাতির এই ভাবধারায় ভাবিত ছিলেন বলেই মূলত রামকৃষ্ণ মঠের পুজোগুলোতেই কুমারী পূজা প্রচলিত আছে। ১৯০১ খ্রীস্টাব্দের ১৮ ই অক্টোবর স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে প্রথম কুমারী পুজো শুরু করেন। প্রধানত ষোল বছরের নীচে অরজঃস্বলা মেয়েদের দেবী রূপে পূজা করা হয়ে থাকে।
দুর্গাপুজোর মহাঅষ্টমীর আরেকটি বিশেষ বিষয় হল সন্ধিপুজো। অষ্টমীর শেষ চব্বিশ মিনিট এবং নবমীতিথি শুরুর চব্বিশ মিনিট মিলে মোট আটচল্লিশ মিনিট এই পুজো হয়,সম্পূর্ণ তান্ত্রিকমতে হওয়া এই পুজোয় দেবীকে চামুণ্ডা রূপে পূজা করা হয়
আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের অমাবস্যার দিন মহালয়ার মাধ্যমে যে উৎসব যাপন শুরু লক্ষ্মীপজোর পূর্ণিমায় তার সমাপ্তি। এরই মাঝে মা দুর্গার আগমনে ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী নবমী নিশি পার হয়ে দশমীর ঢাকের তালে মায়ের ফিরে যাওয়া। আবার একটি বছরের অপেক্ষা, আবার দিন গোনা।
বাংলার অনেক ঘরে এইদিন অন্ন অর্থাৎ ভাত না খেয়ে আটা ময়দার লুচি পরোটা রুটি খাওয়ার রীতি রয়েছে। অনেকের মতে এইদিন নিরামিষ আহার করা উচিত। আমি নিজের খোঁজ পর্বে দেখেছি বিশেষত এদেশীয়দের মধ্যে এই ধরণের আহারের প্রবণতা দেখা যায়। আজ সাবেক ভোজন পর্বে এমনই কিছু রান্না হবে,যে পদগুলো খুব বেশিমাত্রায় জনপ্রিয়। বাঙালি বললেই হইহই করে উঠে আসে সাদা ফুলকো লুচি ছোলার ডাল নিরামিষ আলুরদম এবং অবশ্যই রসগোল্লা। ইতিহাস বাদ দিয়ে আজ বরং চেটেপুটে স্বাদ নেওয়া যাক এই জিভে জল আনা পদগুলোর
পদ -- লুচি
উপকরণ -- ময়দা, সামান্য নুন,সামান্য চিনি, বেকিং সোডা এক চিমটি, ঈষদুষ্ণ জল
পদ্ধতি -- সমস্ত উপকরণ খুব ভালভাবে ঘষে ঘষে ময়দার সাথে মিশিয়ে নিয়ে জল দিয়ে মেখে একটা মণ্ড মতো তৈরি করতে হবে, তারপর একটি আধভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে দিতে হবে অন্তত পনেরো মিনিট। তারপর ওই মণ্ড থেকে সমান মাপের ছোট ছোট লেচি কেটে গোল গোল করে বেলে নিয়ে ডুবো তেলে ভেজে নিলেই তৈরি লুচি
পদ -- ছোলার ডাল
উপকরণ -- সেদ্ধ ছোলার ডাল, আদাবাটা, কাঁচালংকাবাটা,জিরেবাটা,গোটা গরমমশলা,গরমমশলা বাটা,তেজপাতা শুকনো লংকা নারকেল কুচি
পদ্ধতি -- ছোলার ডাল পরিমাণ মতো নিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে অন্তত দু'ঘন্টা। এরপর ডালকে প্রেসার কুকারে দুটো হুইসল অবধি অপেক্ষা করে সেদ্ধ করতে হবে। এমনভাবে সেদ্ধ করতে হবে যাতে ডাল গলে না যায়। হিসেবমতো বলতে গেলে ৬০-৬৫% সেদ্ধ করতে হবে। কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে প্রথমে ভেজে নিতে হবে নারকেলকুচি। এরপরে বাকি তেলে তেজপাতা শুকনো লংকা এবং গোটা জিরে এলাচ দারচিনি ফোড়ন দিয়ে হাফ মিনিট ভেজে গন্ধ বেরোতে শুরু করলে তাতে বেটে রাখা আদাবাটা কাঁচালংকাবাটা জিরেবাটা দিয়ে কষাতে হবে মিনিট পাঁচেক। তেল ছেড়ে এলে ওতে সেদ্ধ ছোলার ডাল দ