
" গনগনি " ( travelogue by Joy Karmakar)
গনগনি... কি নামটা অনেকেরই শোনা তাইনা ? গনগনি নামটা শুনলেই মনে পড়ে যায় পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রের একটি সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা স্থান।আপাদমস্তক ভ্ৰমনপিপাসু বাঙালিদের একদিনের জন্য ঘোড়বার এক সুন্দর জায়গা।কোলকাতা থেকে সড়ক ও রেল পথে খুব সহজে পৌঁছানো যায় " বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গনগনি " তে। গনগনি হলো প্রাকৃতিক সৃষ্টির এক অন্যতম নিদর্শন। এর গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে শিলাবতী নদী। এই নদীর রূপ ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভাবে দেখা যায়। ভরা বর্ষাতে যেমন এর দুকূল জলে পরিপূর্ণ, তেমন প্রখর গ্রীষ্মে জল এতোই কম থাকে যে পায়ে হেঁটে নদীর এপার ওপার করা যায়। গনগনিতে সূর্যাস্ত এর সময়ে এই স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখবার মতো হয়ে। সাধারণত শীতকালেই এখানে আসা উচিত, গ্রীষ্মের দাবদাহে এখানে আসা উচিত নয়। আমিও তাই বেরিয়ে পড়েছিলাম এমনই এক শীতের সকালে ।

দিনটা ছিল ২৪শে ডিসেম্বর ২০১৭ রবিবার। ডিসেম্বর মাস ঠান্ডা বেশ জাঁকিয়ে পড়তে শুরু করেছে। খুব ভোরে উঠে পড়ে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম সাঁতরাগাছি স্টেশনের উদ্দেশ্যে। কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে টিকিট কেটে উঠে বসলাম রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসে। রবিবার হলেও ট্রেনে ভিড় ভালোই ছিল। যাই হউক ঘড়িতে ঠিক সকাল ৬.২০ , ট্রেন হুইসেল দিয়ে ছাড়লো। সুজ্জিদেবের দেখা তখুনও নেই, হবে কীকরে চারিদিক যে কুয়াশার চাদরে ঢাকা। এই কুয়াশার চাদর ভেদ করে ট্রেন চললো নিজের লক্ষে, আর আমিও চললাম নিজের লক্ষ্যে। দীর্ঘ ২ঘন্টা ৩০মিনিট পর আমি এসে পৌঁছলাম পশ্চিম মেদিনীপুরের শেষ সীমানা গড়বেতা স্টেশনে। ট্রেন থেকে নেমে কিছু খেয়ে পাশের রাস্তা ধরে মূল রাস্তাতে এসে পৌঁছলাম। সেখান থেকে একটি টোটো ধরে ৩ থেকে৪ কিমি পথ অতিক্রম করে নামলাম কলেজ মোড়ে। এবার সেখান থেকে পায়ে হাটা শুরু। লালমাটি ও সুরকির রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম আমার লক্ষ্যে। চোখে পড়ছিল দুপাশে সবুজে ঘেরা জঙ্গল। উফঃ কি রোমাঞ্চকর। আরও এগিয়ে গিয়ে চোখে পড়লো ধানক্ষেত, যেখানে কোথাও কোনো চাষী ব্যাস্ত লাঙল দিতে, আবার কোথাও কোনো গ্রামবাংলার মা ব্যাস্ত তার সন্তানকে খাওয়াতে। এই সব চাক্ষুষ করে এসে হাজির হলাম আমার লক্ষের সামনে। " গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গনগনি "! ওপর থেকে এর রূপ সত্যি আলাদা। পাশ দিয়ে বয়ে চলা শিলাবতী নদী এই রূপ যেনো আরো সুন্দর করে তুলেছে। ধীরে ধীরে নীচে নেমে পড়লাম এই সৌন্দর্য আরো ভালোভাবে উপভোগ করতে। সত্যি প্রকৃতি যেন খুব যত্নকরে এর এই রূপ প্রদান করেছে। একজন শিল্পী যেমন তার শিল্পত্তকে তুলে ধরে, ঠিক তেমনই প্রকৃতিও তার সৃষ্টিকে তুলে ধরেছে । বড় বড় গুহা , এবং তার ভিন্ন আকৃতি , এ যেন এক অপরূপ সৃষ্টি। প্রাকৃতিক উপায়ে যে এত সুন্দর সৃষ্টি হতে পারে তা না দেখে বোঝা মুশকিল। আমিও বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করলাম এই সুন্দর জায়গাটিকে, আর ক্যামেরাবন্দি করলাম অজস্র স্মৃতি। কিন্তু প্রকৃতির এই সৃষ্টির মধ্যে কিছু অবাঞ্ছিত জিনিসও চোখে পড়ল। কোথাও পরে আছে যত্রতত্র ভাঙা কাঁচের বোতল, কোথাও বা খাবার সালপাতার থালা, তাই আমাদের উচিত প্রকৃতির এই সৃষ্টিকে রক্ষা করা কখনই তাকে আবর্জনার স্তুপে ধ্বংস করা নয়। তাই আর ভেবে লাভকি ? চলুন ঘুরে আসুন আর সাক্ষি হয়ে আসুন প্রকৃতির সৃষ্টির।

কি ভাবে যাবেন: সড়ক পথে কোলকাতা থেকে যেতে হলে বিদ্যাসাগর সেতু হয়ে কোনো এক্সপ্রেসওয়ে ৬নং জাতীয় সড়ক হয়ে মেদিনীপুর হয়ে পৌঁছে যান গড়বেতা। রেল পথে যেতে হলে দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে শাখার সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ( সকাল ৬.২০), আরণ্যক এক্সপ্রেস (সকাল ৭.৪৫) এ করে গড়বেতা পৌঁছে সেখান থেকে টোটো বা অটো তে কলেজ মোড়।
উপযুক্ত সময় : গনগনি আসার উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল ( নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি ) ।
খেয়াল রাখবেন : গনগনি এর যে গুহা গুলি আছে বা যে সংকীর্ণ পথ গুলি আছে সেখানে যত্রতত্র মেঠো সাপ থাকে। মাটির সাথে এক রঙ হওয়াতে বোঝা বড় মুশকিল। তাই একটু সজাগ দৃষ্টি রেখে যাওয়া উচিত।
খাওয়াদাওয়া : এখানে সামনে কোনো খাবার কিছু পাবেন না। তাই গড়বেতা বাজার বা স্টেশনে খাবারের দোকান পাবেন।
কোথায় থাকবেন : সাধারণত এই আশে পাশে তেমন হোটেল বা লজ নেই, একটু অদূরে শ্যাম সংঘের আশ্রম আছে, সেখানে থাকবার সুবন্দোবস্ত আছে। এছাড়া স্টেশন লাগোয়া কিছু লজ আর হোটেল আছে।
---------
ছবি ও লেখা সৌজন্যে : জয় কর্মকার